বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৮ অপরাহ্ন
বাগেরহাট (মোংলা) থেকে সজল দাসঃ— মোংলা বন্দরে বিদেশী জাহাজ আসার রেকর্ড মোংলা সমুদ্র বন্দর বাগেরহাটের মোংলা বন্দরে পণ্য খালাসে বিদেশী জাহাজ আসার রেকর্ড করেছে বলে জানিয়েছে মোংলা সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত অক্টোবর মাসেই এ বন্দরে ৯৩টি জাহাজ ভিড়েছে। অতীতে একসঙ্গে এত জাহাজের আগমণ ঘটেনি মোংলা বন্দরে। এমনটাই বলেছেন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, মোংলা বন্দর এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এ বন্দরে নতুন নতুন জাহাজের আগমন ঘটছে। গত মাসে রেকর্ড সংখ্যক জাহাজ এসেছে এ বন্দরে। ওই সব বিদেশী জাহাজ থেকে প্রায় ১১ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা এসব পণ্য থেকে বন্দরের প্রায় ৩২ কোটি ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, এক দশক আগেও ব্যয়ভার বহনে বড় ধরণের লোকসান গুণতে হত মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে। ২০০৮ সাল থেকে এ বন্দরে গাড়ি, খাদ্যশস্য, সার ও ক্লিকার আমদানি এবং হিমায়িত পণ্য রফতানি হওয়ার কারণেই লোকসান কাটিয়ে বর্তমানে বন্দরটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
এদিকে, দিনে দিনে এ বন্দরে জাহাজ বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রমিকদের কাজও বেড়েছে। মোংলা বন্দরের শ্রমিক সর্দার মোঃ ইসরাফিল হাওলাদার ও শাজাহান সিদ্দিকি বলেন, ২০০৮ সালের আগে এ বন্দর মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছিল। শ্রমিকরা এক সময়ে না খেয়ে দিন কাটাতো। অভাবেরর তাড়নায় অনেকে বাড়ি ঘর বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তবে এখন চিত্র ভিন্ন বলে জানান শ্রমিক সর্দাররা। তারা বলেন, এখন এ বন্দরে যে পরিমাণ জাহাজ আসছে সেসব জাহাজে কাজ করাতে এখন শ্রমিক পাঠাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং এ বন্দরকে ঘিরে সরকারের নানা পরিকল্পানার কারণে জাহাজের আনাগোনা বেড়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান অর্থ ও হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, মোংলা বন্দর এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠান। গত পাঁচ অর্থ বছরে বন্দরে জাহাজের আগমন ও আয় বেড়েছে। তিনি বলেন, গত ২০১৪-১৫ ইং অর্থ বছরে জাহাজ এসেছে ৪১৬টি। সেই অর্থ বছরে এ বন্দরে আয় হয়েছে ১’শ ৭০ কোটি ১৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর এই অর্থ বছরে বন্দরের ব্যয় হয়েছে ১’শ নয় কোটি ৪৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ২০১৫-১৬ ইং অর্থ বছরে জাহাজ এসেছে ৪৮২টি। একই অর্থ বছরে আয় হয়েছে ১’শ ৯৬ কোটি ৬১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। এই অর্থ বছরে ১’শ ৩১ কোটি ৮৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ২০১৬-১৭ ইং অর্থ বছরে জাহাজ এসেছে ৬২৩টি। আর এই অর্থ বছরে আয় হয়েছে ২’শ ২৯ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্যয় হয়েছে ১’শ ৫৬ কোটি ৪৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ২০১৭-১৮ ইং বছরে জাহাজ এসেছে ৭৮৪টি। আর অর্থ বছরে আয় হয়েছে ২’শ ৭৬ কোটি ১৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। এই অর্থ বছরে ব্যয় হয়েছে ১’শ ৬৬ কোটি ৮১ লাখ ৪ হাজার টাকা।
সর্বশেষ ২০১৮-১৯ই অর্থ বছরে জাহাজ এসেছে ৯১২টি। এই অর্থ বছরে আয় হয়েছে ৩’শ ২৯ কোটি ১২ লাখ ১৩ হাজার টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ১’শ ৯৬ কোটি ১১ লাখ ৫২ হাজার টাকা। মোংলা বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা, নিজস্ব জাহাজের জ্বালানী খরচসহ পাঁচটি খাতে এই অর্থ ব্যয় হয়েছে বলে জানা যায়।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম মোজাম্মেল হক জানান, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি আর অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং এ বন্দরকে ঘিরে সরকারের নানা রকম পরিকল্পানার কারণে এ বন্দরে জাহাজের আনাগোনা বেড়েছে। এ অবস্থার আরো উন্নত করতে এরই মধ্যে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আগামী ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে এ বন্দরে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বন্দরের চিত্রই পাল্টে যাবে বলেও জানান তিনি।
আমরা জনতার সাথে......“আজকের দিগন্ত ডট কম”
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত “আজকের দিগন্ত ডট কম”। অনলাইন নিউজ পোর্টালটি বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply